ওয়ারেন হেস্টিংসের বৈদেশিক নীতি (Foreign policy of warren Hastings)

ওয়ারেন হেস্টিংস যখন গভর্নর তখন "ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি" ভারতে সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম না হলেও  বাংলায় তারা বণিক সম্প্রদায় থেকে শাসক সম্প্রদায় এ রূপান্তরিত হয়।" ফলে ভারতের অপরাপর রাজ্য ও রাজনৈতিক শক্তির প্রতি তিনি সুনির্দিষ্ট নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, ভারতে ইংরেজদের অধিপত্যকে স্থায়ী রূপ দিতে হলে দেশীয় রাজাদের ইংরেজদের ওপর নির্ভরশীল করে তোলা প্রয়োজন। 

অযোধ্যা নীতি(Ayodhya policy)

ওয়ারেন হেস্টিংস মারাঠা আক্রমণ থেকে বাংলা ও বিহারকে নিরাপদ রাখার জন্য অযোধ্যাকে মধ্যবর্তী রাজ্য "বাফার স্টেট (Buffer State) হিসেবে পেতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি মারাঠাদের আশ্রয় বাস করার অজুহাতে বারাণসীর সন্ধ্যী দ্বারা মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমকে কারা ও এলাহাবাদ প্রদেশ দুটি ফেরত দিতে বাধ্য করেন। এরপর এ প্রদেশ দুটি ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তিনি অযোধ্যা নবাবের কাছে বিক্রি করে দেন।  এভাবে তিনি অযোধ্যার শক্তি বৃদ্ধি করে একে বাফার স্টেট (Buffer State) হিসেবে ব্যবহার করেন।

রহিলা নীতি (Rohila Policy)

বর্তমান ভারতের যুক্ত প্রদেশ সেকালে রহিল খন্ড নামে পরিচিত ছিল। সেখানে রোহিলা - আফগানগন স্বাধীনভাবে শাসন করতেন। অযোধ্যারা উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এ রাজ্যটির সরদার হাফেজ রহমত খাঁ মারাঠা আক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যার নবাবের সাথে এই মর্মে চুক্তি করেন যে, মালা ছাড়া রোহিলা খন্ড আক্রমণ করলে নবাব তাকে সৈন্য দিতে সাহায্য করবেন এবং বিনিময় নবাবকে ৪০ লক্ষ টাকার দেওয়া হবে। ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে মারাঠারা রহিল খন্ড আক্রমণ করলে অযোধ্যার নবাব সুজন তোলা ইংরেজ কোম্পানির সাহায্য পুষ্ট হয়ে মারাঠাদের বিরুদ্ধে  অগ্রসর হন। খবর পেয়ে মারাঠারা ভীত হয়ে বিনা যুদ্ধে ফিরে যায়। 

নবাব চুক্তি অনুযায়ী ৪০ লক্ষ টাকা দাবি করলে আফগান সরদার হাফেজ রহমত খাতা দিতে অস্বীকার করেন। তিনি যুদ্ধের ব্যয় ছাড়াও ৪০ লক্ষ টাকা প্রদানের বিনিময়ে রহিলাখন্ড দখলে ইংরেজ সহায়তা কামনা করলে হেস্টিংস সানন্দে এ প্রস্তাবে রাজি হন। মনিপুর কাচার যুদ্ধে রোহীনারা পরাজিত হয়, হাফেজ রহমত খান নিহত হন এবং প্রায় ২ লক্ষ রহিলা বিতাড়িত হয়।

প্রথম ইঙ্গ -মারাঠা যুদ্ধ (১৭৭৩ - ১৭৮৩)

First Anglo- Maratha war (1773-1783)

পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠা শক্তির বিপর্যয় ঘটলেও তারা একেবারে ধ্বংস হয়নি। মারাঠা নায়ক বালাজি বাজিরাও- এর পুত্র পেশা মাধব রাওয়ের নেতৃত্বে মারাঠা শক্তির পুনরূপ জীবন ঘটে। কিন্তু মাধব রাওয়ের মৃত্যুর পর পেশোয়া পদের জন্য মাধব রাওয়ের ভাই নারায়ন রাও এবং পিতৃত্ব রঘুনাথ রাওয়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতা শুরু হয়। মারাঠাদের এই দ্বন্দ্বে অভ্যন্তরীণ ইংরেজরা হস্তক্ষেপ করলে ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঙ্গো- মারাঠা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।

১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে সুরাটের সন্ধি অনুযায়ী বোম্বাইয়ের ইংরেজ সরকার রঘুনাথ রাওকে পেশোয়া দ্বিতীয় মাধব রাওয়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে সম্পাদন অনুযায়ী ইংরেজ সরকার এই সন্ধি বাতিল করে দেয় এবং সানসেট বন্দরের বিনিময়ে  পুরন্দরের সন্ধি সম্পাদন করেন। 

১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বাহিনী বোম্বাই হতে "পুনা"এবং সানসেট অভিমুখে রওনা হয় কিন্তু তেলিগাঁও এর যুদ্ধে মারাঠাদের কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। ফোলে ওয়াদগাঁও এর সন্ধি দ্বারা ইংরেজরা সকল বিজিত স্থান প্রত্যাহার্পন করতে এবং আশ্রিত রঘুনাথরাওকে হস্তান্তর করতে স্বীকৃত হয়। এরপর ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় যুদ্ধের গাডার্ডের নেতৃত্বে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান।

 তবে মধ্য ভারতের ইংরেজরা সেনাপতি ও পপহামের নেতৃত্বে সিন্ধিয়ার গোয়ালিয়র অধিকার করলে সিন্ধিয়ার প্রচেষ্টায় ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গো - মারাঠা স্বাক্ষরিত হয়।  এর সন্ধি অনুযায়ী ইংরেজরা বিজিত রাজ্যগুলো মারাঠাদের ফেরত দেয়, বিনিময়ে "সলসেট" বন্দর লাভ করে। ইংরেজরা মাধব রাও নারায়নকে পেশোয়া বলে স্বীকার করে নেয়। রঘুনাথ রাওকে বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে প্রথম ইঙ্গো- মারাঠা যুদ্ধে অবসান ঘটে।

Next Post Previous Post