পলাশীর যুদ্ধের কারণ কি ছিলো?

পলাশীর যুদ্ধের বেশকিছু কারণ বিদ্যমান ছিল। এ কারণগুলো আজকের এই আর্টিকেলে আমি শেয়ার করবো। 

পলাশীর যুদ্ধে অনেক কারণ ছিলো, নিম্নে আমি সব গুলো কারণ পর্যায় ক্রমে উল্যেখ করছি। 


প্রথম কারণ

সিরাজ যখন মসনদে বসেন তখন প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী অন্য ইউরোপীয় বণিকগণ উপঢৌকনসহ তাকে অভিনন্দন জানায়, কিন্তু ইংরেজি বণিকরা তা করেনি। এ স্বীকৃত রীতি উপেক্ষা করায় নবাবের প্রতি অসম্মান করা হয়। এতে সিরাজ আপমানিত বোধ করেন ক্ষুব্দ হন।


দ্বিতীয় কারণ

বাণিজ্য শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ইংরেজরা ব্যাক্তিগত ব্যাবসায়ে অবাধে ❝দস্তক❞ ব্যাবহার শুরু করলে এদেশীয় ব্যাবসায়ীরা অত্যান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নবাব বাণিজ্য শর্ত মেনে চলার নির্দেশ প্রদান করলে ইংরেজরা তা অমান্য করে। ফলে নবাব ইংরেজদের প্রতি ক্ষুব্দ হয়ে উঠেন।


তৃতীয় কারণ

ইংরেজরা নবাব আলীবর্দী খানের সময় বাণিজ্য করার অনুমতি পেলেও দুর্গ নির্মাণ করার অনুমতি পায়নি। কিন্তু সিরাজের রাজত্বকালে দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধের অজুহাতে ইংরেজরা কলকাতায় এবং ফরাসিরা চন্দননগরে দুর্গ নির্মাণ শুরু করলে সিরাজ তাদের দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করতে আদেশ দেন। এ আদেশ ফরাসিরা মান্য করলেও ইংরেজরা তা অমান্য করে। এজন্য নবাব তাদের অপর অত্যান্ত ক্ষুব্দ হন।


চতুর্থ কারণ 

ইংরেজরা নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে সন্ধির যাবতীয় শর্র ভঙ্গ করে জনসাধারণের ওপর অত্যাচার শুরু করে ও নবাবকে কর প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্কে অবনতি ঘটে।


পঞ্চম কারণ

নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তার বিরুদ্ধে ষরযন্ত্র করেছিলেন তার খালা ঘসেটি বেগম এবং আরেক খালা মায়মুনার পুত্র পুর্ণিয়ার বিদ্রোহী শাসক শওকত জং। এতে নবাব ইংরেজদের ওপর অসুন্তুষ্ট হন।


ষষ্ট কারণ

নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার খালা ঘসেটি বেগমের পক্ষ অবলম্বনকারী রাজা রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাস ও তার পরিবার প্রচুর ধনদৌলতসহ কলকাতায় পালিয়ে গিয়ে ইংরেজদের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করে। কৃষ্ণদাসকে নবাব সরাসরি তার নিকট সমর্পণের জন্য নারায়ণ দাসকে দূত হিসেবে ইংরেজদের কাছে পাঠান। কিন্তু ইংরেজ গভর্নর ড্রেক নবাবের দূতকে কলকাতা থেকে অপমানিত করে বের করে দেন এবং কৃষ্ণদাসকে ফেরত পাঠাতে অস্বীকার করেন। ইংরেজদের এসব আচরণে নবাব অত্যান্ত ক্ষুব্দ হন।

১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে নবাব ইংরেজদের ধৃষ্টতায় অতিষ্ঠ হয়ে তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য ৪ জুন এক বিরাত সৈনিকবাহীনি নিয়ে কলকাতা অভিমুখে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে নবাব কাশিমবাজারের ইংরেজ কুঠি দখল করেন। নবাবের এ অতর্কিত আক্রমণে বীত হয়ে গভর্নর ড্রেক ও তার সঙ্গীরা ফোর্ট ইউলিয়াম ছেড়ে ফুলতা নামক এক স্থানে আশ্রয় নেয়। ফলে সহজেই নবাব কলকাতা দখল করেন ও আলীবর্দী খানের নামানুসারে এর নাম রাখেন 'আলীনগর'। ১৭৫৬ খ্রীষ্টাব্দের ২০ জুন মি.হলওয়েল ও তার সঙ্গীরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।  আত্মসমর্পণের পএ কোনো ইংরেজের ওপর অত্যাচার করা হয়নি। অথচ হলওয়েল মুক্তি পেয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালায় যে, নবাবের আদেশে ১৪৬ জন ইংরেজ বন্দিকে ১৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪.১০ ফুট প্রস্তবিশিষ্ট ছোট একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল। জুন মাসের প্রচন্ড গরমে এদের মধ্যে ১২৩ জন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মা-রা যায়। বাকি ২৩ জন কোনো রকএ বেঁচে যায়। হলওয়েল কর্তৃক প্রচারিত এ কাহিনি ইতিহাসে 'অন্ধরুপ হত্যা' নামে পরিচিত। অন্ধরুপ হত্যা কাহিনির পিছনে কোনো ঐতিহাসিক সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় না। ইংরেজদেরকে নবাবের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করাই ছিল এ কল্পিত কাহিনির উদ্দ্যেশ্য।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা অধিকার করার পর সেনাপতি মানিক চাঁদকে কলকাতা রক্ষার দায়িত্বে রেখে রাজধানী মুর্শিদাবাদ ফিরে যান। ইতোমধ্যে অন্ধরুপ হত্যা কাহিনি এবং নবাব কর্তৃক কলকাতা দখলের সংবাদ মাদ্রাজের পৌঁছালে ইংরেজ সেনাপতি ওয়াটসনবো রবার্ট ক্লাইভ মানিক চাঁদের নামমাত্র প্রতিরোধ ভেঙ্গে কলকাতা পুনরায় দখল করেন। নবাব চারদিকে ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল লক্ষা করে ইংরেজদের সাথে এ অবস্থায় এক অপমানজনক সন্ধি করতে বাধ্য হন। এ সন্ধিই বিখ্যাত 'আলীনগিরের সন্ধী' নামে খ্যাত। এ সন্ধির সর্তানুসারে নবাব দিল্লির সম্রাট কর্তৃক ইংরেজদের প্রদত্ত বাণিজ্য সুযোগ সুবিধা, যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি প্রদান, টাকশাল নির্মাণ এবং দুর্গ সংস্কার করার অনুমতি প্রদান করতে বাধ্য হন। কিন্তু উচ্চাবিলাষী ক্লাইভ এরপরও নবাবের ওপর সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। বাংলায় ইংরেজী কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষনের জন্য তিনি সিরাজকে সংহাসনচ্যুত করার লক্ষ্যে কিছু স্বার্থান্বেষি, ক্ষমতালোভী কুচক্রী, দেশদ্রোহী ও বিশ্বাসঘাতক ব্যাক্তিদের সমন্মে গঠিত একটি শক্তিশালী দলের সাথে গোপনে ষড়যন্ত্র শুরু করলেন। 

এই ছিলো যুদ্ধ কেন হয়েছিলো তার মূল ঘটনা। ধন্যবাদ সবাইকে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য। 



Next Post Previous Post