উপন্যাসের ধারণা ও সংজ্ঞা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

উপন্যাস গদ্যে লেখা এক ধরনের গল্প। মানুষ গল্প বলতে ভালোবাসে। সুপ্রাচীনকাল থেকেই এটা চলে আসছে। মানুষ তখন মুখে মুখে বলত। লিখে রাখার চল ছিলোনা। পরে এরই ধারাবাহিকতায় আবির্ভার ঘটে উপন্যাসের। তবে উপন্যাস শুধু চোখে দেখা গল্প নয়, সেই সব ঘটনার সঙ্গে লেখকেরা নিজের ভাবনা, কল্পনাকে মিশিয়ে দিয়ে রচনা করেন উপন্যাস। উপন্যাসে তাই আমরা পাই ঐপন্যাসিকের জীবনানুভূতির প্রকাশ। এভাবেই উপন্যাস হয়ে উঠেছে এক ধরনের সৃষ্টিশীল রচনা।

উপন্যাসের ধারণা

মানুষ এরপর যখন লিখে রাখতে শেখে, তখনই আবির্ভাব ঘটে উপন্যাসের। পনেরো শতকে ছাপাখানার আবির্ভাবের পর বিলুপ্তি ঘটে গল্পকথকদের। শুরু হয় আধুনিক উপন্যাসের কাল। প্রথমে এই আধুনিক উপন্যাসের সুত্রপাত ঘটে ইউরোপে, পরে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। শুরু হয় আধুনিক উপন্যাস লেখা।

শুরুতেই বলেছি, উপন্যাসে থাকে একটি প্রধান বা মুল গল্প। এই গল্পটি গড়ে তোলার জন্যে থাকতে পারে আরও কিছু পার্শ্বগল্প। ফলে, উপন্যাসের আকার সাধারনত ছোট হয় না, আবার এটি নিতান্ত ছোট গল্প ও নয়। তবে এর আকার কত টুকু হবে, মূল গল্পটি গড়ে তুলতে গিয়ে পার্শ্বগল্পের আশ্রয় নেওয়া হবে কিনা, এ বিষয়ে সাহিত্য তাত্ত্বিকগণ একমত হতে পারেন নি। এ. এম. ফাস্টার তার আসপেক্টস অব দ্যা নভেল গ্রন্থে বলেছেন, উপন্যাস হচ্ছে 'সুনির্দিষ্ট আয়তনের গদ্যকাহিনি'।

উপন্যাসের সংজ্ঞা

এই আয়তনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, উপন্যাসের শব্দসংখ্যা কমপক্ষে পঁচিশ হাজার হওয়া বাঞ্চনীয়। তবে এর সর্বোচ্চ সংখ্যা কত হবে, ফাস্টর সে সম্পর্কে কিছু বলেন নি। প্রখ্যাত ফরাসি ঐপন্যাসিক মার্সেল প্রুস্তের লেখা একটি উপন্যাসের (In Search of Lost Time) শব্দসংখ্যা বারো লাখের মতো। এটিই এ পর্যন্ত লেখা পৃথিবীর সবচেয়ে পড় উপন্যাস। লেভ তলস্তয়ের ওয়্যার অ্যান্ড পিসের শব্দসংখ্যাও অনেক - পাঁচ লাখ সাতাশি হাজারের মতো।

ইতালির বিখ্যাত নন্দনতাত্ত্বিক ও ঐপন্যাসিক উমবার্তো একো আবার সাত শব্দের এক বাক্যে রচিত একটি লেখাকে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম উপন্যাস বলে দাবি করেছেন শুধু আকার নয়, উপন্যাসের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধেও সাহিদ্য তাত্ত্বিকগণ একমত হতে পারেন নি। এর কাহিনি কিভাবে উপস্থাপন করা হবে, কাহিনির বিষয়-আশয় কী হবে, ভাষারীতির ধরন কেমন হবে- এসব বিষয়ে সাহিত্য তাত্ত্বিকগণ নিজেদের স্বাতন্ত্র প্রকাশের জন্য আলাদা আলাদা পথ বেছে নিয়েছেন।

উপন্যাস সাধারণভাবে বড় ধারাবাহিক বা বৃহত্তর সময়ে বা স্থানে ঘটিত ঘটনাবল্ল মৌল্য নিয়ে সম্পর্কিত থাকে। এটি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে এবং চরিত্রগুলি কাহিনীটি বাস্তব ও ভাবনামূলক ভূত দেয়।

একটি ভালো উপন্যাস তার পাঠকদের উত্তেজনা এবং ভাবনার সাথে জড়িত করতে সক্ষম হতে হবে, এবং সামাজিক বা ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকেও তার মূল ধারণা বোঝাতে হবে।




Next Post Previous Post