ক্যাশলেস বাংলাদেশ - নগদবিহীন অর্থ লেনদেন

২০২৭ সালের মধ্যে দেশের ৭৫% আর্থিক লেনদেন কাগজের টাকার পরিবর্তে ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নেয় সরকার।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার কথা বলা হয়। ২জুন ২০২৩ তার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে সেই ধারণা দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার

২০২৭ সালের মধ্যে দেশের ৭৫% আর্থিক লেনদএন কাগজের টাকার পরিবর্তে ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নেয় সরকার।

সেই লক্ষ্যে প্রান্তিক পর্যায়ে চারটি জেলায় পাইলট কর্মসূচি চলছে। সম্প্রতি Interoperable Digital Transaction Platform (IDTP) উদ্ভোধন করা হয়েছে। যার ফলে একটা মাত্র মেশিনে যেকোনো পেমেন্ট কোম্পানি থেকে একটা কোড দিয়ে টাকা নেওয়ে যায়। তৃতীয় পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংল্কের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড প্রণয়নের উদ্যোগের কথা জানান গভর্নর।

বর্তমানে ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ডের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের ব্যাংকগুলোতে অভ্যান্তরীণ ও আন্তরজাতিক পর্যায়ে লেনদেন করতে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড সেবা দিচ্ছে।

ক্যাশলেস মানে কি?

ক্যাশলেস নামক বিপ্লবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বর্তমান চিত্র দেখলে আমরা ভবিষ্যৎ ডিজিটাল বিশ্ব থেকে অনেক পিছিয়ে। মার্কেট মার্চেন্টের বিশ্লেষণকৃত তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫৪টি দেশ সম্পূর্ণ ক্যাশলেস হওয়ার পক্ষে আছে আর ৩২টি দেশ এখনো নগদ অর্থের মাধ্যমে বিনিময় করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সবচেয়ে বেশি ক্যাশলেস লেনদেন করা দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে অনেক আগে থেকেই। 

ক্যাশলেস বলতে কি বোজায়? আসলে ক্যাশলেস বলতে বোঝায় নগদ অর্থবিহীন লেনদেন। যেমন টাকা ফিজিক্যালি স্পর্শ ছাড়াই লেনদেন। যেখানে ক্যাশ বা নগদ অর্থ ব্যবহার ছাড়াই লেনদেন করা হয়। নগদবিহীন লেনদেনের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডেড, বিট কার্ড, MFS পেমেন্ট যেমন- বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় ইত্যাদি ডিজিটাল ওয়ালেট এবং অন্য যেকোনো মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট করাকে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন বলে।
Cashless Mobile Payment

ক্যাশলেস সোসাইটি বা বাংলাদেশকে ক্যাশলেস লেনদেরনের দিকে এগিয়ে নিতে ইতি মধ্যে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ৫২টি আবেদন থেকে দুটিকে লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

লাইসেন্স পাওয়া ডিজিটাল ব্যাংক দুটি হচ্ছে- নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি এবং এসিআই-এর কড়ি ডিজিটাল পিএলসি।

ডিজিটাল ব্যাংক

১ জুন ২০২৩ অর্থমন্ত্রী আহম্মেদ মুস্তফা কামাল, জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তিতায় ডিজিটাল ব্যাংকিং চালুর ঘোষণা দেন। এরপর ২৪ জুন ২০২৩ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দেশে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের নীতিমালা অনুমোদন করে।

১. পরিচালনা পদ্ধতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য প্রধান কার্যালয় থাকবে। তবে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি হবে স্থাপনাবিহীন। অর্থাৎ এই ব্যাংক কোনো ওভার দ্যা কাউন্টার (OTC) সেবে দেবে না। এর নিজস্ব কোন শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবেনা। সব সেবাই হবে অ্যাপ-নির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে। দিন-রাত ২৪ ঘন্টাই সেবা মিলবে। গ্রাহকদের সুবিধার্থে ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্য কোন উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পন্য দিতে পারবে। 

লেনদেনের জন্য কোন প্রকার প্লাস্টিক কার্ড দিতে পারবেনা। ডিজিটাল ব্যাংক কোনো ঋণপত্র LC খুলতে পারবেনা। বড় এবং মাঝারি শিল্পেও কোনো ঋণ দিতে পারবে না। শু ছোট ঋণ দিতে পারবে। 

ডিজিটাল ব্যাংক স্তাপনের শর্ত

ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের অন্য নূন্যতম মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা মূলধন দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাইসেন্স দেওয়ার ৫ বছরের মধ্যে এই ব্যাংককে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব IPO ছাড়তে হবে। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার CEO ব্যাংকিং পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
Next Post Previous Post