বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্মক্ষেত্র সমূহ

সময় গতিশীল। সময়ের এই গতিময়তার সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় সমাজ, পরিবর্তিত হয় আমাদের চারপাশ, কাজের পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট। আমাদের দেশের কর্মক্ষেত্রেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। আজ থেকে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগেও আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের পেশা ছিল কৃষিকাজ কিংবা কৃষিভিত্তিক শিল্পে শ্রম দেওয়া।

{getToc} $title={Table of Contents}

আজ বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে কর্মক্ষেত্রে এসেছে ব্যাপক বৈচিত্র্য। আজকের দিনে আমাদের দেশে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কী কী ধরনের কাজের সুযোগ আছে, কোন কোন পেশা গ্রহণ করা সম্ভব তা আজকের আর্টিকেলে জানাবো। পাশাপাশি, আমাদের জন্য ভবিষ্যতে কী ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হতে পারে, সে বিষয়েও জানার চেষ্টা করব। কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে গভীরভাবে জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। তবেই আমরা স্বপ্ন ও আগ্রহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পেশা গ্রহণ করতে পারব।

আর্টিকেলের সূচিপত্রঃ চাকরি



স্থানীয় পর্যায় কর্ম

বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতি এদেশের প্রকৃতির মতোই বৈচিত্র্যময়। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে অনেকেই বলে থাকেন যে আমাদের দেশে স্থানীয় পর্যায়ে কাজের সুযোগ কম। কথাটা মোটেও সত্য নয়। বহুকাল থেকেই বাংলাদেশের সমাজ স্থানীয় পর্যায়ে অনেক পরিশীলিত ও বৈচিত্র্যময় কর্মক্ষেত্রের সমাবেশে ঐশ্বর্যশালী। প্রত্যেক গ্রামেই ছিল কুমার, চাষি, কামার, জেলে, ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা বংশপরম্পরায় ও নিজের আগ্রহের ভিত্তিতে পেশা নির্বাচন করতেন। নিজের মেধা, শ্রম ও ক্ষমতার সবটুকু উজাড় করে তারা গতিময় করেছিলেন দেশের অর্থনীতি। আমাদের চারপাশে এখনো ছড়িয়ে আছে সেসব পেশা। এসব পেশায় গিয়ে সুনাম অর্জনের সাথে সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজন শুধু একটু চোখ মেলে দেখা, খানিকটা মেধা ও সৃজনশীলতা খাটিয়ে নতুন রূপে নিজের ভবিষ্যতকে সাজিয়ে নেওয়া।

কৃষিকাজ

কৃষিকাজ পৃথিবীর আদিম পেশাগুলোর একটি। মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য বিশ্বের সকল দেশের মতো এদেশেরও কোটি কোটি কৃষক রাত-দিন শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই কৃষিকাজকে হেয় করে দেখে, ভাবে এটা গুরুত্বহীন কাজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃষিকাজ একটি দারুণ লাভজনক পেশা। আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশে, কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ওইসব দেশের মানুষ নিজের গ্রামে ফিরে কৃষিকাজ করেন । তারা অবশ্য আমাদের মতো অসচেতনভাবে কৃষিকাজ করে না। তারা চাষ করে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে এবং তাদের ফলনও হয় অনেক বেশি। ফলে সেসব দেশ, তাদের অভ্যন্তরীণ খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে খাদ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকেন। বাংলাদেশকে উন্নতির স্বর্ণশিখরে নিয়ে যেতে পারেন এদেশের কৃষকগণ।

বাংলাদেশের মতো এমন উর্বর ভূমি পৃথিবীর খুব কম দেশেই আছে। কাজেই দেশের এখন প্রয়োজন আধুনিক কৃষক। আমরা কি হতে পারব আধুনিক কৃষক? আধুনিক কৃষক হতে হলে কী কী দক্ষতা প্রয়োজন, তা কি আমরা জানি? আধুনিক কৃষক হতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন শিক্ষা। শিক্ষিত না হলে কখন কোন ফসল চাষ করলে বেশি লাভ হবে, কীভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল চাষ করা সম্ভব, কী কী সার ব্যবহার করলে ফসল ভালো হবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়। যারা শিক্ষিত নন, তারা বেশিরভাগ সময় সঠিক তথ্য সঠিক সময়ে জানতে পারেন না। শিক্ষিত না হলে,বীজ ও সার-এর প্যাকেটের গায়ে যে নিয়মাবলি লেখা থাকে তা পড়া সম্ভব হয় না। যথাযথভাবে সেগুলো জমিতে ব্যবহার করাও তাদের জন্য কঠিন।

কোনো শিক্ষিত মানুষ যখন কৃষিকাজ করেন, তখন তিনি চাষ সংক্রান্ত সকল বিষয় খতিয়ে দেখেন; লাভ-ক্ষতি ও তার সামর্থ্য বুঝে চাষের কাজে হাত দেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের কৃষি শিক্ষা বিষয় অধ্যয়নের সময় আধুনিক কৃষিকাজ সম্পর্কিত অনেক কিছু জানা যায়; পড়াশোনা জানলে অন্যান্য বই পড়েও শেখা যায়।

শিক্ষিত চাষি জৈব সার তৈরি করে চাষের খরচ অনেক কমিয়ে আনতে পারেন। একই সাথে পারেন সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অধিক ফলন। নিত্য-নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে কাজ যেমন সহজ হয়ে যায়, তেমনি দ্রুত অনেক কাজ সম্পন্ন করা যায়। আধুনিক কৃষকগণ এ থেকে বিস্তর মুনাফা করতে পারেন। সবজি চাষ করে অনেকেই আজ আর্থিক স্বচ্ছলতার সাথে জীবনধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। আমরা কি তেমন কেউ হতে চাই?

পশু-পাখি পালন

পশুপালন কৃষিকাজের মতোই পুরনো একটি পেশা। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পশুপালন খুবই লাভজনক। বাংলাদেশের জমি খুব উর্বর। এখানে জমি পতিত রাখলেও তাতে প্রচুর ঘাস জন্মায়। এছাড়াও অতি সহজেই এসব জমিতে পশু-পাখির খাদ্য উৎপাদন করা যায়, যা বিশ্বের অনেক দেশেই সম্ভব নয়। বিশ্বের অনেক দেশের জলবায়ু খুবই ঠাণ্ডা- প্রায়ই বরফ পড়ে। সেসব দেশে পশু-পাখি পালন করা খুবই কঠিন। অথচ বাংলাদেশে যেমন বরফও পড়ে না, তেমনি মরুভূমির মতো খুব গরমও নেই।

নাতিশীতোষ্ণ এই জলবায়ু পশু-পাখি পালনের জন্য অতি উত্তম। প্রয়োজন শুধু সচেতনভাবে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পশু-পাখি পালন করা। তোমরা চাইলে অনেকেই আধুনিকভাবে পশুপাখি পালন করতে পার। মাত্র সাড়ে চার থেকে পাঁচলাখ টাকা খরচ করে ১০টি উন্নতজাতের দুগ্ধবতী গাভী বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পালন করে প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা অর্থাৎ বছরে একুশ থেকে বাইশ লক্ষ টাকা উপার্জন করা সম্ভব । খুব অবাক লাগছে তাই না? এসো হিসাব করে দেখি-

উন্নত জাতের একটি গাভী প্রতিদিন ১০-১৫ লিটার দুধ দেয়। মনে কর, তোমাদের গরু দৈনিক গড়ে ১২ লিটার দুধ দেয় । তোমার এমন ১০টি গরু রয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতিলিটার দুধের দাম ৫০ টাকা। তাহলে ১০টি গরুর দৈনিক দুধের পরিমাণ ১২০ লিটার। সুতরাং দৈনিক আয় হবে ৬,০০০ টাকা। এভাবে মাসে অর্থাৎ ৩০ দিনে আয় হবে ১,৮০,০০০ টাকা। এলাকা ভেদে দাম কম বেশি হতে পারে।

আবার এই গাভীগুলো নিয়মিত বাচ্চা প্রসব করবে। সেগুলো বিক্রি করেও অনেক টাকা পাওয়া সম্ভব। একই রকম লাভ করা যায় পাখি (যেমন- হাঁস, মুরগি, কবুতর, কোয়েল ইত্যাদি) লালন পালন করে। তবে সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লালনপালন করতে হবে; অন্যথায় এমন লাভ করা সম্ভব হবে না। আর বিজ্ঞানসম্মতভাবে পালন করতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে হবে.

স্থানীয় উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানে চাকরি

বাংলাদেশে অনেক এনজিও রয়েছে যেগুলো স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ সকল এনজিওতে চাকরি করলে একদিকে যেমন নিজের নিয়মিত উপার্জন হয়, তেমনি দেশের ও সমাজের মানুষের উন্নয়নের জন্যও ভূমিকা রাখা যায়। এ সকল উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান সমাজের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পশুপালন, মাছচাষ, শিশু ও নারী অধিকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিশুদের সুরক্ষা ইত্যাদি নানা বিষয়ে কাজ করে থাকে। এ সকল প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে হলে একদিকে যেমন ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতে হয়, তেমনি পেশাগত যোগাযোগ ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়।

স্থানীয় কারখানায় চাকরি

প্রত্যেক এলাকায় বিশেষ ধরনের কিছু কলকারখানা থাকে। যেমন চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙা শিল্প, নারায়ণগঞ্জে লঞ্চ তৈরি ইত্যাদি। আমরা এ সকল কারখানায় চাকরি করেও জীবিকা নির্বাহ করতে পারি। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, এ সকল কারখানায় বেতন কম। ভালো করে খোঁজ নিলে দেখবে, এ সকল কারখানায় শুধু অদক্ষ শ্রমিকদের বেতন কম। যারা ওই সকল কারখানার বিভিন্ন কাজে দক্ষ, তারা কিন্তু বেশ ভালো উপার্জন করে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন কারখানার জন্য ভিন্ন ভিন্ন রকম দক্ষতার প্রয়োজন । আমাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা সম্পর্কে জানতে হবে এবং চাকরির আবেদন করার আগেই সে বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকার অনেক ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটসমূহেও নানা রকম দক্ষতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। যথাযথ পরিকল্পনা করে আমাদের সামনে অগ্রসর হতে হবে। দক্ষ ও পরিশ্রমী হলেই অনেক ছোট পরিসরে ক্যারিয়ার শুরু করেও অনেক বড় হওয়া যায়, অনেক সুনাম অর্জন করা যায়।

স্থানীয় পরিসরে ব্যবসায়

পৃথিবীর সেই আদিকাল থেকেই ব্যবসায় একটি সম্মানজনক পেশা। ব্যবসায় ছোট-বড় বিভিন্ন পরিসরে করা যায়, বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ব্যবসায় করা যায়। আগ্রহ, দক্ষতা ও পুঁজির উপর নির্ভর করে নানা রকম ব্যবসায় করা সম্ভব । আমাদের দেশে অধিক প্রচলিত স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায় সমূহের মধ্যে রয়েছে কাঁচামালের ব্যবসায়, ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়, পোশাক ও কাপড়ের ব্যবসায়, ফলমূল ও শাক- সবজির ব্যবসায়, মাছের ব্যবসায়, মুদি পণ্যের ব্যবসায়, যানবহন ও পরিবহণের ব্যবসায় ইত্যাদি। যে ব্যবসায়ই করা হোক না কেন, যদি তা সততা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের সাথে করা যায় তবে তাতে উন্নতি হবেই।

জাতীয় পর্যায় চাকরি

বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন রকম চাকরির সুযোগ রয়েছে। সরকারি, বেসরকারি, বিদেশি, বহুজাতিক বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রচুর সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। সাথে সাথে রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যবসায় করার সুযোগ। এজন্য শিক্ষাজীবনের শুরুতেই লক্ষ্য স্থির করে নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যারা নিজেদের পেশাগত কাজে খুবই দক্ষ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ভালো সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরি দেয়। জাতীয় পর্যায়ে আমাদের দেশে চাকরি করার অনেক সুযোগ রয়েছে। যেমন- সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আবার রয়েছে সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে চাকরি।

ক্যাডার সার্ভিস চাকরি

বাংলাদেশে সরকারি চাকরির কথা বললে প্রথমেই যে চাকরিটির নাম আসে তা হলো ক্যাডার সার্ভিস। বাংলাদেশে ২৭টি ক্যাডার রয়েছে। এর প্রতিটিতে চাকরি করার সুযোগ কেবল বাংলাদেশের শিক্ষিত নাগরিকদের। বাংলাদেশের সরকারি কর্ম কমিশন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর (ক্যাডারের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী) অনূর্ধ্ব ৩০ বছর বয়সের নাগরিকদের মধ্য হতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করে চাকরির জন্য সুপারিশ করে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ক্যাডার কর্মকর্তাগণকে নিয়োগ প্রদান করেন । ক্যাডার কর্মকর্তাগণ দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চাকরি করার পাশাপাশি অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাই এটি আমাদের দেশের শিক্ষিত নাগরিকদের প্রথম পছন্দের পেশা। এ চাকরিগুলো পেতে হলে আমাদের শিক্ষাস্তরে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে হবে।

শিক্ষাস্তরের গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রাকপ্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা । প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রায় প্রতিবছরই শিক্ষক নিয়োগ করা হয় । সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হতে চাইলে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে (সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী)। প্রধান শিক্ষক হতে চাইলে তাকে স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি বিএড ডিগ্রি সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন ও ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষকতার ক্যারিয়ার শুরু করা যেতে পারে।

মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রতিবছর নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যদি শিক্ষাজীবনে ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ থাকে আর স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকে, তাহলে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার ক্যারিয়ার শুরু করা যায়। এক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার জন্য বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এন টি আর সি এ) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতার জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া ভিন্ন। সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করতে চাইলে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আর বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতার জন্য নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে এবং বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ শূন্য পদে নিয়োগ দিয়ে থাকে। কলেজে শিক্ষকতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। শিক্ষকতার সর্বোচ্চ পর্যায় বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার। এ জন্য শিক্ষার সকল পর্যায়ে ভালো ফলাফল থাকতে হবে।

আইনসংক্রান্ত পেশা 

সম্মান এবং সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য বর্তমান সময়ে আইন পেশার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। আইন পেশায় এখন নতুন নতুন মাত্রা ও সম্ভাবনা যোগ হয়েছে। মর্যাদাপূর্ণ এ পেশায় পূর্বে সাধারণত পুরুষরাই আসতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীরাও এ পেশায় আসছেন । নিম্ন আদালতে বিচারক ও আইনজীবী হিসেবে কাজের সুযোগ তো আছেই, আছে সর্বোচ্চ আদালতের একজন আইনজীবী কিংবা বিচারপতি হওয়ার সম্ভাবনা। এ ছাড়া নিম্ন ও উচ্চ আদালতে সরকার-নিয়োজিত আইনজীবী হিসেবেও পেশা গড়ার সুযোগের পাশাপাশি রয়েছে নোটারি আইনজীবী হওয়ার সুযোগ । বিচার বিভাগ ছাড়াও নির্বাহী আদালতগুলোতে আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করার অধিকার রাখেন। এমনকি আইনজীবীরা আদালতে ও বাইরে বিভিন্ন চেম্বার ও ফার্মে ইন হাউস আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে পারেন। আইনজীবী হতে হলে আইনের উপর স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর বার কাউন্সিল থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইন পেশায় নিয়োজিত হতে হয়। এ প্রক্রিয়া অবশ্য নিম্ন আদালতের জন্য । সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হওয়ার পদ্ধতি হচ্ছে, নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত নিম্ন আদালতে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ।

কেউ যদি বিচারক হতে চান, সে ক্ষেত্রে তাকে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আইনজীবী হিসেবে কারও যদি কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে তিনি পাবেন বিচারপতি হওয়ার সুযোগ। একজন আইনজীবীর রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার সুযোগ । যেমন পারিবারিক, জমিজমা, ফৌজদারি, রিট, কোম্পানি, শ্রম আইন কিংবা আয়কর ইত্যাদি।

এসব ছাড়াও বর্তমানে আইন পেশায় আরও নতুন কয়েকটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক ও মেধাস্বত্ব, ট্রেডমার্কস, পেটেন্ট ও ডিজাইনবিষয়ক আইনি কাজ। পরিবেশ আইন নিয়েও সারা দেশে কাজের পরিধি বিস্তৃত হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে সাংবাদিকদের মামলা পরিচালনা, কাস্টমস ও ভ্যাট- সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রও বাড়ছে। মানবাধিকারকর্মী হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থায় কাজের ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক-বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো ইদানীং আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দিচ্ছে। দেশে আইন সাংবাদিকতার সুযোগ বেড়েছে আগের তুলনায়।

ব্যাংক ও বিমা চাকরি

ব্যাংক ও বিমা খাতেও রয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষিত নাগরিকদের চাকরি করার সুযোগ। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের ব্যাংক ও বিমা কোম্পানি রয়েছে। এ পেশাতেও নানা ধরনের সুযোগ রয়েছে । এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি ছাড়াও শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের কর্মচারী হিসেবে চাকরি করার সুযোগও আছে।

পোশাকশিল্প চাকরি

বাংলাদেশের পোশাকশিল্প বিশ্বখ্যাত। এদেশের তৈরি পোশাকের যেমন বিশ্বব্যাপী কদর আছে, তেমনি আছে পোশাক তৈরির বিভিন্ন উপকরণ প্রস্তুতকারী শিল্পের। আমাদের দেশে আশির দশক থেকে রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের উন্নয়ন ঘটতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এ শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজারও দ্রুত সম্প্রসারিত হতে থাকে। এ শিল্পের মাধ্যমে দক্ষ-অদক্ষ ব্যক্তির কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে । একটা সময় ছিল যখন শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা এ শিল্পে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু বর্তমানে সুযোগ-সুবিধা এবং বেতন উপযুক্ত হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষিত তরুণ পোশাকশিল্পে তাদের ক্যারিয়ার শুরু করছেন। দেশের ক্রমবিকাশমান এ শিল্পে শুধু যে শিক্ষিত ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে তা নয়; এবং দেশের পিছিয়ে পড়া অনেক বেকার যুবক-যুবতী তাদের শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

গার্মেন্টস শিল্পে মার্চেন্ডাইজার, ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, ফ্যাশন ডিজাইনার, প্রোডাকশন কর্মকর্তা, বাণিজ্য বিষয়ক কর্মকর্তা ইত্যাদি পদে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে। এ পদগুলো ছাড়া আরও কিছু পদ রয়েছে সেখানেও কাজ করার প্রচুর সুযোগ আছে যেমন ফিনিশিং ইনচার্জ, কাটিং মাস্টার, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, ডাইং মেশিন অপারেটর, প্যাটার্ন মেকার ইত্যাদি। এসব পদে কাজ করে ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জন সম্ভব । পোশাকশিল্পের জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি। প্রশিক্ষণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই এ সেক্টরে সাফল্য অর্জন করা যায় না। গার্মেন্টস সেক্টরে যেহেতু অনেক ভাগ আছে তাই কোন বিষয়ে ক্যারিয়ার শুরু করবে সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রয়োজন।

নৌযান ও নৌপরিবহণ শিল্প চাকরি

সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরির কারিগর হওয়ার সুযোগ এখন আমাদের দ্বারপ্রান্তে। কারণ জাহাজশিল্পকে ঘিরে দেশে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত তৈরি হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশেও আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ রপ্তানি করছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ে বাজার বাড়ায় দেশের জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিনিয়ত দক্ষ জনবল খুঁজতে হচ্ছে। ফলে এ খাতে দিন দিন কাজের সুযোগ বাড়ছে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী একজন নেভাল আর্কিটেক্ট জাহাজের নকশা প্রণয়ন করেন।

পুরো জাহাজের নকশাকে আবার কয়েকটি অংশে ভাগ করা হয়। এরপর শিপ বিল্ডিং প্রকৌশলী ডিজাইন অনুযায়ী জাহাজের ওয়েলডিং, ফিটারিং, প্রিন্টিং ও গুণগত যন্ত্রাংশের ব্যবহার নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করেন। পুরো কাজটি করতে হয় নিখুঁত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। কারণ, গ্রাহকেরা জাহাজ নির্মাণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে গুণগতমান নিশ্চিত করে থাকেন। জাহাজশিল্পে শিপ বিল্ডিং প্রকৌশলীর পাশাপাশি সহকারী প্রকৌশলী, সুপারভাইজার ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করার সুযোগ আছে।

বিদেশেও ভালো বেতনে এ পেশার ব্যাপক চাহিদা ও কাজের সুযোগ আছে। বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সরকারিভাবে পরিচালিত নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন শিপ বিল্ডিং টেকনোলজি ও দুই বছর মেয়াদি শিপ বিল্ডিং, শিপ ফেব্রিকেশন ও শিপ বিল্ডিং অ্যান্ড মেকানিক্যাল ড্রাফটসম্যানশিপ কোর্স চালু রয়েছে।

অটোমোবাইল শিল্প চাকরি

মানুষের চলাচলের অন্যতম বাহন হচ্ছে গাড়ি। বিগত বছরগুলোতে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে গাড়ির ব্যবহার বহুলাংশে বেড়েছে। আগের তুলনায় বর্তমানে দেশে অনেক বেশি গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে। তোমরা জেনে আনন্দিত হবে যে বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক বাস, ট্রাক, অটোরিকশার শুধু চেসিস আমদানি করে, এগুলো তৈরির কাজ এখানে সম্পন্ন হচ্ছে। আমদানিকৃত এসব গাড়ি পরবর্তী সময়ে সার্ভিসিং বা মেরামতের জন্যই অটোমোবাইল কারিগরি শিল্পের বিকাশ লাভ করছে। দ্রুতগতিতে। আর এ শিল্পের নানা ধরনের কাজে দক্ষ অটোমোবাইল প্রকৌশলী প্রয়োজন।

তাই অটোমোবাইল শিল্পে যারা আগ্রহী তাদের দৃষ্টি এখন এদিকেই। অটোমোবাইল শিল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে নতুন গাড়ি তৈরি এবং তা বিক্রয় ও পরবর্তী সার্ভিসিং এবং মেরামতসহ যাবতীয় কারিগরি কাজ। সাধারণত এই শিল্পে কাজের ধরন বিবেচনায় তিনটি ভাগ রয়েছে। এগুলো হলো : উৎপাদন, সেলস এবং সার্ভিসিং। উৎপাদন ক্ষেত্রে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন প্রকৌশলীরা তাদের দক্ষতা দেখানোর ব্যাপক সুযোগ পান। সেলস বিভাগে গাড়ি বিপণন, বিক্রয় ও বিতরণের কাজ করা হয়ে থাকে। গ্রাহকের কাছে গাড়ি সম্পর্কে ভালো ধারণা প্রদান ও ইঞ্জিন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা এই বিভাগের মূল দায়িত্ব। বিক্রয়- পরবর্তী সার্ভিসিং বলতে ওয়ারেন্টিযুক্ত বা সার্ভিস ফি দিয়ে গাড়ি মেরামত ও সার্ভিসিং করাই হলো সার্ভিসিং বিভাগের প্রধান কাজ।

Next Post Previous Post