পদ্মা সেতুর টোল এত বেশী কেন? দেশের অর্থে তৈরি পদ্মাতে কেন টোল দিতে হবে? Why Padma Bridge Toll So High?

বাংলাদেশের প্রতিটি মেগা প্রজেক্টই দেশের উন্নয়ন ও দেশের মানুষের জীবনকে আরো সহজ করে তোলার জন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতুটি নির্মাণ প্রকল্পটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি ড্রিম প্রজেক্ট, যা সম্পুর্ন দেশীয় অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিন আঞ্চলের ১৯টি জেলা রাজধানী ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে নিরবিচ্ছিন সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থার আহতায় আসাতে উক্ত অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার পরিবর্তন এসেছে।

দক্ষিন অঞ্চলের জেলা গুলোর সাথে দেশের অন্যান্য জেলা গুলোর ব্যাবসা বাণিজ্য বেড়েছে যা দেশের অভারঅল GDP বৃদ্ধিতে কন্ট্রিবিউট করছে। সেতুটি উদ্ভবনের পুর্বে ২০২২ সালের মে মাসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় পদ্মা সেতুতে চলাচলের জন্য বিভিন্ন ক্লাসের পরিবহনের হার নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সেতুতে টোলের পাড়াপাড় হার নির্ধারণ এর পর টোলের হার নিয়ে দেশের জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনেক প্রশ্ন। বেশিরভাগ জনগণেরই ধারনা পদ্মা সেতুর টোলের হার অনেক বেশী। এছাড়া সম্পুর্ন দেশীয় অর্থায়নে তৈরি এই সেতুতে কেন টোল দিতে হবে? এটা নিয়েও চলছে অনেক কথা বাত্রা। আমার আজকের এই আর্টিকেলে আমি জানাবো কেন পদ্মা সেতুতে টোল দিতে হচ্ছে এবং টোলের হার কেন এত বেশি?


২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সর্বোচ্ছ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মেগা প্রজেক্ট পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষনা দেয়। ২০১৪ সালে মূল সেতু নির্মাণে China Major Bridge Engineering Co. Ltd  এবং রিভার ট্রেনিং এর জন্য Sinohydro Corporation Limited এর সাথে চুক্তির মাধ্যমে সে বছরের ডিসেম্বর মাসে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। 

পদ্মা সেতুটি নির্মাণ কাজে ব্যায় হয়েছে ৩০,১৯৩ কোটি টাকা। মূল সেতু ও মূল সেতুটির মোট দৈর্ঘ ৯.৩০ কিলোমিটার। এছাড়াও সেতুটির জন্য ১২ কিলোমিটার আপ্রোচ রোডের পাশাপাশি এ প্রকল্পের জন্য ব্রিজের ২ পাশে ১৪৭১ হেক্টোরস জমি অধিগ্রহণ এবং ১৪ কিলোমিটারের রিভার ট্রেনিংয়ের কাজ করা হয়। প্রজেক্টির মেইন ব্রিজের উভয় পাশে আপ্রোচরোড, সার্ভিস এরিয়া ও জমি অধিগ্রহণ সহ আরো অনেক কিছু বাস্তবায়নের কাজ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। দ্বিতল হওয়ায় পদ্মা সেতুর উপরের অংশে চলছে বাস ও যানবাহন এবং নিচের অংশে চলবে রেইল। 

পদ্মা ব্রিজ পাড়াপাড়ে প্রতিটি যানবাহনের জন্য নির্দিষ্ট টোল ফি রাখা হয়েছে। যা নিম্নে উল্যেখ করা হলো।
নাম টোল রেট
বাইক ১০০৳
কার বা জী ৭৫০৳
মাইক্রোবাস ১৩০০৳
ছোট বাস ১৪০০৳
বড় বাস ২৪০০৳
পিকয়াপ ১২০০৳
৫ টোনের ছোট ট্রাক ১৬০০৳
৩ এক্সেলের বড় ট্রাক ৫৫০০৳
৩ এক্সেলের বেশি বড় ট্রাক ৬০০০৳
পদ্মা সেতুর টোলের হার বর্তমানে পদ্মা  নদীতে চলমান ফেরীর ভাড়ার চেয়ে গড়ে প্রায় দের গুন বেশি। অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় দৈর্ঘতম ৪.৮ কিলোমিটারের বংগবন্ধু সেতুর টোলের তুলনায় পদ্মা সেতুর টোল প্রায় দ্বিগুন! 

পত্রপত্রিকা সহ সোসিয়াল মিডিয়াতে রয়েছে পদ্মা সেতুর টোল নিয়ে নানা প্রশ্ন ও মোতামোত দেখা গেছে। অনেকেই কনফিউসড যে দেশের অর্থায়ন তৈরি পদ্মা  সেতুতে টোল কেন দিতে হবে? আর দিলেও তা কেন এত বেশি। 

এবারে এক্সপ্লেইন করা যাক আসলেইকি পদ্মা সেতুর টোল বেশি? আর বেশি হলেও অন্যান্য টোলের তুলনায় এত বেশি কেন?

পদ্মা সেতুতে টোল এত বেশি কেন?

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সুত্রে স্বাধারণত বিদেশী অর্থায়নে তৈরি সেতু নির্মাণ করা হলে, সেতুর টোল হার নির্ধারনে দাতা সংস্থা বা ঋণ প্রদান কারী রাষ্ট্রের বিভিন্ন শর্ত ও পরামর্শ থাকে। কিন্তু দেশীয় অর্থায়নে সেতু নির্মিত সেতুর ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন বাধ্যকথা থাকেনা! যার প্রেক্ষিতে স্বাধারণত সেতু চালু হবার আগে ফেরীতে যে হার ভাড়া নেওয়া হতো, সেই অনুযায়ী সেতুর টোলের হার নির্ধারন করে থাকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। তবে প্রথম আলোর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, সেতু বিভাগের সিনিয়র সচীব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান- বিদ্যমান ফেরীর চেয়ে সেতুর টোলের হার দেরগুন নির্ধারন করাটা স্টান্ডার্ড প্রেক্টিস। তবে টোল হার বেশী হলে সরকার তা কমাতেও পারে। 

অর্থাৎ ফেরী ভাড়ার চেয়ে পদ্মা সেতুর টোলের যে পার্থক্য তা সরকারি স্টান্ডার্ড মেনেই ঠিক করা হয়েছে। তবে ফেরীর চেয়ে উচ্চ মূল্য হলেও আদতে টোল হার বেশী নয়। আর সেতুতে টোল কালেকশন সুধু বাংলাদেশেই নয়, বরং বিশ্বের ছোট বড় প্রায় সব দেশেই টোল কালেকশন করা হয়। এমনকি বিভিন্ন দেশের এক্সপ্রেস ওয়ে থেকেও টোল আদায় করা হয়। 

যেমন-Financial Express এর একটি তথ্য সুত্রে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতের হাইওয়ে গুলো থেকে ৩৮ হাজার কোটি রুপিরও বেশি টোল কালেকশন করা হয়েছে। এছাড়াও US এর বিভিন্ন এক্সপ্রেস ওয়ে ও ছোট খাটো ব্রিজ থেকেও টোল নেওয়া হয়।  

বাংলাদেশের প্রথম এক্সপ্রেস ওয়ে ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়েতেও রয়েছে টোল। 

সবই বুঝলাম কিন্তু এই টোলের টাকা কি করা হবে?

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করেছে সেতু বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয় সেতুটি নির্মাণের জন্য ১% ইন্টারেস্টে ৩০,১৯৩ কোটি টাকা ঋন হিসেবে দিয়েছে সেতু বিভাগকে, যা আগামী ৩৫ বছরে অর্থমন্ত্রণালয়কে ফেরত দিবে সেতু বিভাগ! প্রথম আলোর একটি রিপোর্ট অনুসারে জাপান সরকারের ঋণ মওকুফ ফান্ডের ৩০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবেনা। সুতরাং সেতু বিভাগকে আসল  ২৯,৯০০+ কোটি টাকা এবং ১% ইন্টারেস্ট সহ মোট পরিশোধ করতে হবে ৩৬,৪০৩ কোটি টাকা। তার মধ্যে প্রথম বছরেই সরকারকে ৬০০ কোটি টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া সেতুটি রক্ষণা বেক্ষনায় প্রতি বছরেই ব্যায় করতে হবে। 

পদ্মা সেতুতে প্রতিবছর বিভিন্ন  সার্ভিসিং করতে হবে। যার খরচ টোল আদায়ের মধ্য দিয়েই হবে। সব মিলিয়ে আমার মতে একটি দেশের GDP ঠিক রাখতে হলে যেমন ইনভেস্ট প্রয়োজন ঠিক তেমনি যেই প্রজেক্টে ইনভেস্ট করা হচ্ছে সেই প্রজেক্ট থেকে কিছু অংশ ইন্টারেস্ট দেশের ভবিশ্যতের জন্য অবশ্যই আশা করা যায়।  
Next Post Previous Post