BSTI কী? বিএসটিআই কি? What is BSTI?

১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের জারীকৃত অধ্যাদেশ ৩৭ (The Bangladesh Standards and Testing Institution Ordinance, 37 of 1985) এর মাধ্যমে সেন্ট্রাল টেস্টিং ল্যাবরেটরী (CTL)  এবং বাংলাদেশ স্ট্যন্ডার্ডস ইন্সটিটিউশন (BDSI) কে একীভূত করে  শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ স্ট্যন্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (BSTI) প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কৃষি পণ্য বিপণন ও শ্রেনীবিন্যাস পরিদপ্তরটিও (Department of Agricultural Grading and Marking) বিএসটিআই’র সঙ্গে একীভূত হয়।

ভিশনঃ  মান প্রণয়ন ও মানসম্মত পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে যুগোপযোগী প্রতিষ্ঠান হিসাবে রুপান্তর।   

মিশনঃ  পণ্য ও সেবার মান প্রণয়ন,  গুণগতমান ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত সেবাসমূহকে আন্তর্জাতিক/আঞ্চলিক মানদন্ডে উন্নীতকরণ এবং সেবাগ্রহীতাদের স্বার্থ রক্ষাক্রমে  জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে  সহায়তা ।

বিএসটিআই’র দায়িত্ব 

দেশের মান নিয়ন্ত্রণকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএসটিআই’র মূল দায়িত্ব হচ্ছেঃ

ক) দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্য, বৈদ্যুতিক ও প্রকৌশল পণ্য, খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্যের প্রক্রিয়া ও পরীক্ষণ পদ্ধতির জাতীয় মান প্রণয়ন।

খ) প্রণীত মানের ভিত্তিতে পণ্যমাসগ্রীর গুণগত মান পরীক্ষণ/বিশে­­ষণ এবং পণ্যের গুণগত মানের নিশ্চয়তা বিধান।

গ) দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মেট্রিক পদ্ধতির প্রচলন, বাস্তবায়নসহ ওজন ও পরিমাপের  সঠিকতা তদারকি ও নিশ্চিতকরণ।

সুষ্টুভাবে এ সকল কর্মকান্ড সম্পাদনের মাধ্যমে দেশে শিল্পের বিকাশ, মান সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন এবং পণ্য মানকে  বর্তমান মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রতিযোগিতায় উপযোগী করে তোলা বিএসটিআই’র লক্ষ্য। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে অবাধ বাণিজ্যের পরিবেশে পণ্য মানকে আন্তর্জাতিক বাজারের উপযোগী করে তুলতে বিএসটিআই কাজ করে যাচ্ছে।

জাতীয় মান প্রতিষ্ঠান (National Standards Body) হিসেবে বিএসটিআই জনসেবামূলক যেসব কাজ করছে সংক্ষেপে তা নিম্নে দেয়া হলোঃ

১)       মান উইং দেশের আর্থ সামাজিক প্রযুক্তি, কারিগরী জ্ঞান এবং রপ্তানী বাণিজ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে কৃষি ও খাদ্য, পাট ও বস্ত্র, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স, রসায়ন ও প্রকৌশল এ পাঁচটি বিভাগের মাধ্যমে পণ্যের  জাতীয় মান প্রণয়ন করে থাকে। ৬টি  বিভাগীয় কমিটির অন্তর্গত ৭২ টি শাখা কমিটি/কারিগরী কমিটি জাতীয় মান প্রণয়নের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। বিএসটিআই ১৯৭৪ সালে আইএসও সদস্যপদ লাভ করে। National Standards Body (NSB) হিসেবে বিএসটিআই  ISO, Codex, AFIT এর ফোকাল পয়েন্ট।

২)       সার্টিফিকেশন মার্কস কার্যক্রমের মাধ্যমে পণ্যসামগ্রীর মান নিয়ন্ত্রণ ও গুণগত মানের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়। উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও গুণগত মান উন্নয়নে উদ্বুদ্ধকরণ ও পরামর্শ প্রদানও এ উইং এর  দায়িত্ব। স্বেচ্ছা ও বাধ্যতামূলক উভয় পদ্ধতিতেই এ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত সরকার কর্তৃক গেজেটের মাধ্যমে ১৬৬ টি পণ্যকে বাধ্যতামূলক সার্টিফিকেশন মার্কস এর আওতায় আনা হয়েছে। গুণগতমান সনদ কিংবা গুণগতমানের প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার ছাড়া এ সকল পণ্য বাজারজাতকরণ আইনত দন্ডনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিতকল্পে বাজার আকাষ্মিক পরিদর্শনের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য মান যাঁচাই করা হয়। এ ছাড়া  নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমান আদালত  পরিচালনার  মাধ্যমে নকল/ ভেজাল পণ্য  চিহ্নিতকরণ ও  নিম্নমানের  পণ্য উৎপাদন/ আমদানী ও বাজারজাতকরণ  বন্ধ করার  কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

৩।      ‘The Standards of Weights and Measures Ordinance, ১৯৮২’ অধ্যাদেশের মাধ্যমে সারাদেশে ওজন ও পরিমাপের মেট্রিক পদ্ধতি প্রচলন ও বাস্তবায়ন তদারকি আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিতকরণ ছাড়াও ক্যালিব্রেশন ও ভেরিফিকেশন কাজ সম্পাদন করা হয়। এ কার্যক্রমের আওতায় বিএসটিআই সারাদেশে বাটখারা, দাঁড়িপাল­­া, মিটার, লিটার ইত্যাদি যন্ত্রপাতির ভেরিফিকেশন কাজও করে থাকে।

৪।       পরীক্ষণ উইং এর মাধ্যমে পণ্যের সঠিকতা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডর্ডস বা মান অনুযায়ী সঠিক আছে কিনা তা যাঁচাই করা হয়।

৫।       বিএসটিআই’র সেবামূলক কার্যক্রম জনগনের নিকট পৌছানোর লক্ষ্যে বিএসটিআই প্রধান অফিস ছাড়াও ৫টি আঞ্চলিক অফিস কাজ করে যাচ্ছে। ঐ সকল অফিসের মাধ্যমে অধিকতর জনগোষ্ঠী বিএসটিআই এর সেবা গ্রহনে সক্ষম হচ্ছেন।

৬।      জনসাধারন/ভোক্তা সাধারণকে বিভ্রান্তি ও হয়রানির হাত হতে রক্ষার্থে  সকল প্যাকেটজাত পণ্যের উপর যথাযথ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ‘‘বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড ওজন এবং পরিমাপ (পণ্যসামগ্রী মোড়কজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৭’’ শিরোনামে একটি বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। উক্ত বিধিমালা অনুযায়ী পণ্যের  মোড়কে উৎপাদিত পণ্যের উপাদান, প্রকৃত ওজন, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, খুচরা বিক্রয়মূল্য ইত্যাদি সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা বাধ্যতামূলক  করা হয়েছে।

৭।      বিএসটিআই’র  সেবামূলক কার্যক্রম আরো স্বচ্ছ ও ত্বরান্বিত করতে সিটিজেন চার্টার (নাগরিক অধিকার সনদ) তৈরী করা হয়েছে। যেখানে বিএসটিআই’র সেবা ধর্মী কার্যক্রম সম্পাদনের সময়সীমা নির্ধারন  এবং এসব সেবা পেতে কি হারে ফি দিতে হবে তার উলে­­খ রয়েছে। সিটিজেন চার্টারটি জনগনের জন্য বিএসটিআই ওয়েবসাইটে সন্নিবেশ করা আছে। 

৮।       ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার :

নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী সকল সেবা এক জায়গা থেকে প্রদানের লক্ষ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০০৮ তারিখ থেকে বিএসটিআইতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হয়েছে। এ  সেন্টারের সেবা সমূহঃ

ক)      জনসাধারণকে সিটিজেন  চার্টার মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে  পন্য পরীক্ষণ প্রতিবেদন প্রদান  নিশ্চিত করা;

খ)       অকৃতকার্য পণ্যের ক্ষেত্রে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অকৃতকার্যতার  কারণসহ  পরীক্ষণ ফলাফল গ্রাহককে  অবহিত/সরবরাহ নিশ্চিতকরণ;

গ)       এসএমই শিল্প এবং মহিলা উদ্যোক্তাদের দ্রুত সেবা প্রদান;

ঘ)       পণ্যের গুণগত মানের  লাইসেন্স দ্রুত প্রদান;

ঙ)       মিডিয়া সেলের মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনয়ন;

চ)       মান বিক্রয়।

ছ)       স্বেচ্ছায় লাইসেন্স গ্রহনেচ্ছু উদ্যোক্তাদের জন্য (V.P.C.S ) বিশেষ কাউন্টার স্থাপন এবং সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ।



Next Post Previous Post