বাংলা ভাষা

বাঙালি জনগোষ্ঠী যে ভাষা দিয়ে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে তার নাম বাংলা ভাষা। বাংলা ভাষায় কথা বলে প্রায় ত্রীশ কোটি মানুষ। এর মধ্যে বাংলাদেশে ষোলো কোটি এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দশ কোটি মানুষের বাস। এছাড়া ত্রিপুরা, আসাম, বিহার, ঝরখন্ড, ওড়িশাসহ ভারতের অন্যান্য প্রদেশে প্রায় তিন কোটি এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আরো প্রায় এক কোটি বাংলাভাষী মানুষ রয়েছে। মাতৃভাষী মোট জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলা পৃথিবীর 6ষ্ট বৃহত্তম ভাষা। এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা। 

পৃথিবির ভাষাগুলোকে ইন্দো-ইউরোপীয়, চীনা-তিব্বতীয়, আফ্রিকীয়, সেমীয়-হেমীয়, দ্রাবিড়ীয়, আস্ট্রো-এশীয় প্রভৃতি ভাষা পরিবারে ভাগ করা হয়ে থাকে। ইংরেজি, জার্মান, ফরকসি, হিস্পানি, রুশ, পর্তুগিজ, ফারসি, হিন্দি, উর্দু, নেপালি, সিংহলি প্রভৃতি ভাষার মতো বাংলা ভাষাও ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের সদস্য। বাংলা ভাষার নিকটতম আত্মীয় আহমীয়বো ওড়িয়া। দ্রুপদি ভাষা সংস্কৃত এবং পালির সঙ্গে বাংলা ভাষার রয়েছে ঘনিষ্ট সম্পর্ক।

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের আদি ভাষা বহু বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার পরিণত হয়েছে। এই বিবর্তনে যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্তর বাংলা ভাষাকে অতিক্রম করতে হয়েছে, সেগুলো হলো ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ভারতীয় আর্য, প্রাকৃত, বাংলা। আনুমানিক এক হাজার বছর আগে পুর্ব ভারতীয় প্রাকৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে। বাংলা ভাষার লিখিত রুপের প্রাচীনতম নিদর্শন 'চর্যাপদ'।

বাংলা ভাষার রয়েছে কালগত ও স্বাতন্ত্র। এক হাজার বছর আগেকার ভাষা, পাচঁশো বছর৷ আগেকার ভাষা, এমনকি উনিশ শতকে প্রচলিত ভাষার সঙ্গে বর্তমান কালের ভাষা আলাদা। আবার ভৌগোলিক এলাকাভেদে বাংলা ভাষার নানা বৈচিত্র লক্ষ করা যায়। ভাষার এই আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে বলা হয় উপভাষা। 

বাংলা ভাষার নিজস্ব লিপি রয়েছে। এই লিপির নাম বাংলা লিপি। বাংলা লিপিতে মূল বর্নের সংখ্যা ৫০ টি, স্বরবর্ণ ১১টি এবং ব্যাঞ্জনবর্ন ৩৯ টি। 

প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে উপমহাদেশে ব্রাম্মী লিপির জন্ম হয়। ব্রাম্মী লিপির পুর্ব-ভারতীয় শাখা দশম শতক নাগাদ কুটিল লিপি নামে পরিচিত লাভ করে। বাংলা লিপি এই কুটিল লিপির বিবর্তিত রুপ। আহমিয়া, বোড়ো, মনিপুরি প্রভৃতি ভাষাও বাংলা লিপিতে লেখা হয়। সংস্কৃত এবং মৈথিলি ভাষা এক সময়ে এই লিপিতে লেখা হতো। 

বাংলাদেশের জীবনযাত্রার প্রায় সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যাবহারের বিষয়টি সরকারিভাবে বাধ্যতামূলক।  এছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা প্রদেশের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা বাংলা। 



Next Post Previous Post