ই-লার্নিং ও বাংলাদেশ

পৃথিবীতে জ্ঞান অর্জনের একটা সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি দির্ঘদিন থেকে মোটামুটি একইভাবে কাজ করে আসছিলো। তথ্যপ্রযুক্তি উন্নত হওয়ার পির প্রথমবার সেই পদ্ধতির এক ধরনের পরিবর্তন হতে শুরু করছে এবং ই-লার্নিং নামে নতুন কিছু শব্দের সাথে আমরা পরিচিত হতে শুরু করেছি। ই-লার্নিং শব্দটি ইলেক্ট্রনিক লার্নিং কথাটির সংক্ষিপ্ত রূপ এবং এটা বলতে আমরা পাঠদান করার জন্যে সিডি রম, ইন্টারনেট, ব্যাক্তিগত নেটওয়ার্ক কিংবা টেলিভিশন চ্যানেল ব্যাবহার করার পদ্ধতিকে বুঝিয়ে থাকি। মনে রাখতে হবে ই-লার্নিং কিন্তু মোটেও সনাতন পদ্ধতিতে পাঠদানের বিকল্প নয়, এটি সনাতন পদ্ধতির পরিপুরক। উদাহরণ দেওয়ার জন্যে বলা যায়, শ্রেণি কক্ষে বিজ্ঞানের একটা বিষয় পড়ানোর সময় অনেক কিছুই হয়ত হাতে কলমে দেখানো সম্ভব নয়। যেমং সুর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণ ইত্যাদি। শ্রেণিকক্ষে পাঠ দিতে দিতে শিক্ষক ইচ্ছে করলেই মাল্টিমিডিয়ার সাহায্য নিয়ে আরো সুন্দরভাবে বিষয়টি দৃশ্যমান উপস্থাপন করতে পারেন। সেটি এমনকি Interactiveg-ও হতে পারে।

বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী বিশাল। সে কারণে স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যাও বিশাল। নানা ধরনের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে আমাদের স্কুলগুলোতে দক্ষ সিক্ষকের অভাব রয়েছে। লেখাপড়ার জন্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ বলতে গেলে নেই। ল্যাবরেটরি অপ্রতুল, ফলে হাতে-কলমে বিজ্ঞানের এক্সপিরিমেন্ট করার সুযোগ খুব কম। এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্যে ই-লার্নিং অনেক বড় একটা ভূমিকা রাখতে পারে। দক্ষ একজন শিক্ষকের পাঠদান ভিডিও করে নিয়ে সেটি অসংখ্য স্কুলে বিতরণ করা যেতে পারে। একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে বোঝানোর জন্যে অনেক ধরনের সহায়তা প্রক্রিয়া ছাত্রছাত্রীদের দেয়া যেতে পারে। একজন শিক্ষক চাইলে নিজেই তার পাঠদানে সহায়তা করার জন্যে প্রয়োজনীয় বিষয় তৈরি করতে পারেন এবং সেটি বার বার ব্যাবহার করতে পারেন। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষকই এটি ব্যাবহার করছেন। 

সারা পৃথিবীতেই ই-লার্নিং জন্যে নানা উপকরণ তৈরি হতে শুরু করেছে। পৃথিবীর বড় বড় অনেক বিশ্যবিদ্যালয় অসংখ্য কোর্স অনলাইনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং যে কেউ সেই কোর্সটি গ্রহণ করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের পরিক্ষা নিরিক্ষা হচ্ছে এবং অনেক সময়েই একজন সেই কোর্সটি নেয়ার পর তার হোমওয়ার্ক জমা দিয়ে কিংবা অনলাইনে পরিক্ষা দিয়ে সেই কোর্সটির প্রয়োজনীয় ক্রেডিট পর্যন্ত অর্জন করতে পারছে।

আমাদের বাংলাদেশেও এতে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা এ ধরনের বেশ কিছু ওয়েব পোর্টাল তৈরি করেছেন এবং সারা পৃথিবী থেকে যে কেউ বাংলা ভাষায় সেই কোর্সগুলো গ্রহণ করতে পারে। বিশেষ করে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে প্রশিক্ষন নেয়ার উপযোগী এই ধরনের সাইটগুলো দেশে-বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। 

আমাদের দেশে উত্তম পাঠদানের সীমাবদ্ধতা দূর করার ব্যাপারে ই-লার্নিং অনেক বড় ভূমিকা রাখিতে পারলেও আমাদের সব সময় মনে রাখতে, এটি কিন্তু কোনভাবেই প্রচলিত পাঠদানের বিকল্প নয়। প্রচলিত পাঠদানের সময় একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের সরাসরী দেখতে পারেন। তাদের সাথে কথা বলতে পারে, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের নানাভাবে ভাব বিনিময় করতে পারে। শুধু তাই নয়, তারা পাশাপাশি একে অন্যকে সাহায্য কররে পারে, একে অন্যের সহযোগী হয়ে শিখতে পারে। 

ই-লার্নিংয়ের বেলায় এই বিষয়টি সময়ই অনুপস্থিতি থাকে, পুরো প্রক্রিয়ায় মানবিক অংশটুকু না থাকায় পদ্ধতিটা যান্ত্রিক বলে মনে হতে পারে। সে কারণেই ই-লার্নিংকে সফল করতে হলে শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি উদ্যোগী হতে হয়। আমাদের বাংলাদেশে ই-লার্নিংয়ের বড় সুযোগ আছে, কারণ অনেক বড় বড় সীমাবদ্ধ আসলেই ই-লার্নিং ব্যাবহার করে সমাধান করে ফেলা সম্ভন। তবে প্রচলিত ই-লার্নিংয়ের জন্যে ইন্টারনেটে 


স্পিড প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং ই-লার্নিংয়ের শিখনসামগ্রী (Meterials) তৈরি করার প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমান সরকার গুরুত্বের সাথে এ ধরনের শিখনসামগ্রী তৈরি করছে। এতে আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের শিক্ষা অর্জনে সক্ষম হবে।



Next Post Previous Post